চট্রগ্রাম প্রতিনিধি ::
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেল লাইন নির্মাণে দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৬ হাজার ১৮৯ কোটি টাকায় প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণ করা হবে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়ায় আগামী দুই–এক মাসের মধ্যে ওয়ার্ক অর্ডার দিলেই চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেল লাইনের কাজ শুরু হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান। গত বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটবর্তী ঘুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের কাজের ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়। এ প্রকল্পের কাজের লট–২ এ সিসিইসিসি–ম্যাক্সে জয়েন্ট ভেঞ্চারকে ৩ হাজার ৫০২ কোটি টাকা এবং লট–১ এ সিটি জয়েন্ট ভেঞ্চারকে ২ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকায় ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কাজের ঠিকাদার নিয়োগের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান আজাদীকে জানান, দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রথমত জরুরি ভিত্তিতে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে আমরা কাজ শুরু করবো। এ মুহূর্তে এ প্রকল্পে টাকার কোনো সংকট আছে কিনা জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক জানান, আমার কাছে এই মুহূর্তে টাকার কোনো সংকট নেই। এডিবি টাকা দিয়েছে। আমরা ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে কাজ শুরু করতে পারবো।
তিনি জানান, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এরপর চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত কাজ শুরু হবে। সেটি আলাদা একটি প্রকল্প।
বহুল প্রত্যাশিত চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইনের এই প্রকল্পটি অর্থ সংস্থান না হওয়ায় বছরের পর বছর আটকে ছিল। গত জুলাই মাসে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ১৫শ’ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার চুক্তির পর অবশেষে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্প। মূল প্রকল্পের জন্য মোট ৪ কিস্তিতে এডিবি ১৫শ’ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান। প্রথম কিস্তির ৩০০ মিলিয়ন ডলার প্রদানের জন্য গত জুলাই মাসের ২১ তারিখ এডিবি ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। প্রথম কিস্তি বাস্তবায়িত হলে দ্বিতীয় কিস্তির ৪০০ মিলিয়ন ডলার এরপর তৃতীয় কিস্তির ৫০০ মিলিয়ন ডলার এবং চতুর্থ কিস্তির ৩০০ মিলিয়ন ডলার ছাড় দিবে এডিবি।
এই প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে সাড়ে ২২শ’ কোটি টাকা জমা দিয়েছে সরকার। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের টাকা দিয়েছে সরকার এবং মূল প্রকল্পের টাকা দিবে এডিবি। ২০১০ সাল থেকে টাকার জন্য প্রকল্পটি ঝুলে আছে। এখন টাকার সংস্থানও হয়ে গেছে, ঠিকাদারও নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান আরো জানান, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৮ হাজার ২০ কোটি টাকা। ডুয়েল গেজের এ রেললাইন দুটি প্যাকেজে বাস্তবায়িত হবে। এ প্রকল্পের নির্মাণকালীন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে তিন বছর। রেলওয়ে কর্মকর্তারা আশা করছেন, ২০২০ সালের শুরুতেই সম্পূর্ণভাবে চালু হবে বহুল আলোচিত এ রেল যোগাযোগ ।
প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে এই লাইন শুরু হবে। এরপর চন্দনাইশের অল্প অংশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, রামু হয়ে কক্সবাজার উপজেলার ঝিলংঝায় পৌঁছাবে।
পাঠকের মতামত: